এবার শোনাবো ২৩৯৫ টাকায় সাজেক ঘোরার গল্প। সরাসরি খরচের কথায় যাই,
ঢাকা থেকে বাস ভাড়া ৫২০/-
মাঝপথে কুমিল্লা বিরতিতে নাশতা ৩০/-
খাগড়াছড়ি নেমে সকালের নাশতা ৩৭/-
সাজেকের পিক-আপ/ চাঁদের গাড়ি ৬৪৫/-
সাজেকে প্রবেশ টিকিট ২৯/-
দুপুরের খাবার ১৫০/-
কটেজ ভাড়া ১৬৪/-
বার-বি-কিউ ১৩৫/-
সকালের নাশতা ৪৫/-
দুপুরের খাবার ৯০/-
ঢাকার বাস ৫২০/-
মাঝপথে কুমিল্লা বিরতিতে নাশতা ৩০/-
মোট খরচ ২৩৯৫/-
এগুলা একেবারে ব্যাসিক খরচ, যা না করলেই না তাই দিলাম। আমাদের খরচ হয়েছে ২৬০০ টাকার মত। তবে ১০-১২ জনের গ্রুপ হলে খরচ টা এমন থাকবে। এর কম হলে কিছুটা বাড়বে খরচ। এবার খরচ + খরচের বিষয়বস্তু গুলো ভেঙ্গে বলি,
আমরা বন্ধুরা যাই ৮জন। খাগড়াছড়িতে ঢাকা থেকে আসা ৩জন বড় ভাই এসে জানায় যে আমাদের সাথে যেতে চান তারা। তাই তখন থেকে আমরা ১১জনের দল হয়ে যাই!
> বাস ইকোনো পরিবহন,কলাবাগান থেকে রাত ১০ঃ৩০ মিনিটে
> কুমিল্লা বিরতিতে রোল খাই।
> খাগড়াছড়ি নেমে সকালের নাশতায় থাকে পরোটা+ভাজি/ডাল+ডিম ভাজি
> সাজেকের চাঁদের গাড়ির রেট ফিক্সড করা ছিল ৭১০০/-, যা কোনোভাবেই কমানো যায় নাই। অনেক ধরনের চাঁদের গাড়ি থাকে ঐখানে। একটু ঘুরে দেখে আমরা গাড়ি নেই যার ছাদ খোলা যায়, কারণ গাড়িতে দাড়ায়া মজা নিতে না পারলে টেম্পু টেম্পু লাগে। আর আমরা যেই গাড়ি টা নিয়েছিলাম তাকে পিক-আপ ডাকে। আমাদের ড্রাইভার সমরঞ্জন মামাও সেই এক্সপার্ট ছিলেন।
> সাজেকের প্রবেশ টিকেট জনে ২০/-, এবং গাড়ির জন্য ১০০/-
> নেমেই দুপুরের খাবারের খোজ নিয়ে জানতে পারি, ১) দেশী মুরগি+ আলুভর্তা + ডাল + ভাত = ১৮০/- ; ২) ফার্মের মুরগি+ আলুভর্তা + ডাল + ভাত = ১৫০/- ; ৩) ডিম + আলুভর্তা + ডাল + ভাত = ১০০/-)
আমরা দেশী মুরগী অর্ডার করি। এরপর চা খাই ১০/- করে কাপ।
> কটেজ নিয়ে অনেকেই বলেছিল যেহেতু ১৬ই ডিসেম্বর যাচ্ছি কটেজ পাবোনা, কিন্তু আমরা অনেক কটেজ খালি পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের টার্গেট ছিল সাশ্রয়ী ট্যুর দেয়ার তাই আমরা আদিবাসিদের বাসায় খোঁজ নিতে থাকি। এবং ১১জনের জন্য ১৮০০ টাকায় ২রুম ম্যানেজ করে ফেলি!
> বার-বি-কিউ এর অভিজ্ঞতা টা খুব বেশী মজার। আদিবাসিরা সবাই এই মৌসুমে ব্যাবসা কে পুরো দমে কাজে লাগাচ্ছে। কারো কাছেই বার-বি-কিউ এর সরঞ্জামাদি চেয়ে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কেউ কেউ বলছিলো দোকানে এসে আপনারা ভেজে বানান! কিন্তু আমরা চাচ্ছিলাম নিজেদের মত করে করতে যা বার-বি-কিউ এ হয়ে থাকে। পরে অনেক খুজে জোনাশ নামের এক স্থানীয় কে ম্যানেজ করলাম। ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম মোট ওজনের ৩টা মুরগির দাম রাখলো ৮৫০/-, মুরগি বানানো, মেরিনেট, মসলা, বার-বি-কিউ বানানোর সরঞ্জাম, লাকড়ি, ডিজেল এর চার্জ চাইলো ৩০০/-। সন্ধ্যায় পরোটা অর্ডার করি বেঞ্জামিন নামের হোটেলে ৩৩টা ৩৩০/-। আমরা শুধু মুরগি গুলা জবাই দিয়ে চলে আসলাম। রাতে আমাদের ফোন করে জানিয়ে দিলো যে সব রেডি, নিয়ে যান। বার-বি-কিউ করলাম হেলিপ্যাড ২ তে।
> সকালের নাশতা করি ঐ বেঞ্জামিন হোটেলে। পরোটা আর ডিম ভাজি।
> দুপুরের খাবার খাগড়াছড়ি তে খাই। ঐখানে দাম রিজনেবল অনেক। ৬০ টাকায় মুরগি, বেগুন ভর্তা, মাছ ভর্তা আর আনলিমিটেড ঝোল এবং ১০ টাকা ভাত।
> তারপর আবার একইভাবে ঢাকার বাস, আর কুমিল্লায় নাশতা।
> ড্রাইভার আমাদের সাথেই খেয়েছিল সব বেলায়, তবে রাতে ছিল আলাদা।
আমরা এক্সট্রা খরচ করি কমলা, কলা, ডাব, গেন্ডারি, পাকা পেঁপে, ফান্টা খেয়ে। সেখানকার ডাব গুলা অবশ্যই ট্রাই করবেন। প্রচুর পানি থাকে, আমরা ডাবের পানি খেতে খেতে হয়রান হয়ে গেসিলাম :3
তাছাড়া আমরা ঢাকা থেকে ফানুশ নিয়ে গিয়েছিলাম বার-বি-কিউ এর পরে ওড়ানোর জন্য। আসার পথে রেসাং ঝর্নার শীর্ষে যাই আমরা দল বেধে। যারা খৈয়াছড়া ঝর্নায় উঠেছেন তাদের জন্য এই ঝর্না কোনো ব্যাপারই না। সময়ের অভাবে আলু টিলা যাওয়া হয়নি আমাদের। তবে চাঁদের গাড়ি/ পিক-আপ নেয়ার আগে অবশ্যই “সাজেক+ঝর্না+টিলার” ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে নিবেন ড্রাইভারের সাথে। নাহলে অনেক ড্রাইভার ই এক্সট্রা চার্জ চাইবে এর জন্যে।
রবি, এয়ারটেল, টেলিটক সিম চলে সাজেকে।
মোবাইল চার্জ দিতে পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখবেন।
বাংলাদেশ আর্মির প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা যাদের সহায়তা ছাড়া এইসব কিছুই সম্ভব ছিলনা। তারা প্রায়ই আমাদের কাছে এসে খবর নিয়েছে, কথা বলেছে, সাবধান করেছে। এবং সকল প্রশংসাই আল্লাহর যিনি এত সুন্দর প্রকৃতি দান করেছেন… <3
হ্যাপি ট্রাভেলিং