
নিম গাছ আমাদের এক বিশেষ উপকারী বন্ধু বৃক্ষ।নিমের জনপ্রিয়তা সে অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। নিমের পাতা থেকে বাকল, শিকড় থেকে ফুল, ফল থেকে বীজ সবগুলোই আবশ্যকীয়ভাবে কাজে লাগে।নিম খরা সহনশীল। নিম ফল পাখির প্রিয় খাদ্য। বর্ষায় নিম ফল পাকলে শালিকসহ আরও অনেক পাখি এসে নিম গাছে ভিড় জমায়।
নিমের ঔষধি গুণ: নিমের গুণ অতুলনীয়। নিম অনেক দ্রুতবর্ধনশীল গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ।
খোস পাচড়া বা চুলকানি: নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়। পাতা ভেজে গুড়া করে সরিষার তেলের সাথে মিষিয়ে চুলকানিতে লাগালে যাদুর মতো কাজ হয়। নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত ধীরে ধীরে সেড়ে উঠতে থাকে। নিম পাতা ঘিয়ে ভেজে এবং সেই ঘি যদি ক্ষতে লাগানো হয় তাহলে ক্ষত অতি সত্বর আরোগ্য লাভ করে।
রোগ থেকে নিরাময়ে নিমের আরো ব্যবহার:
জন্ডিস: জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস একটু মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস একটু মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস আরোগ্য হয়। জন্ডিস হলে এক চামচ রসের সাথে একটু মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। পুরোপুরি নিরাময় হতে এক সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।
কৃমিনাশক: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেটে বড় হয়। চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়। বাচ্ছাদের পেটে কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতার জুড়ি নেই। শিশুরাই বেশি কৃমি আক্রান্তের শিকার হয়। এ জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুড়া দিন ৩ বার সামান্য গরম জল সহ খেতে হবে। আবার ৩-৪ গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবন করলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে নিয়মিত কমপক্ষে এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হবে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম এর বেশি খাওয়ানো যাবেে না ।
বাত: নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী। নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী।
খুশকি ধ্বংশ করতে নিমের ব্যবহার:
নিমের ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদানের জন্য খুশকির চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নিম মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে। খুশকির চিকিৎসায় নিমের ব্যাকটেরিয়া নাশক,ছত্রাক নাশক উপাদানের জন্য খুশকির চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নিম মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে। চার কাপ জলতে এক মুঠো নিমের পাতা দিয়ে গরম করতে হবে যতক্ষণ না জলটা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এই জল ঠান্ডা হলে চুল শ্যাম্পু করার পর এই জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।নিমের জল কন্ডিশনারের মত কাজ করবে। সপ্তাহে ২-৩বার ব্যবহার করুন যতদিন না খুশকি দূর হয়।
ওজন কমাতে: যদি আপনি ওজন কমাতে চান বিশেষ করে পেটের তাহলে নিমের ফুলের জুস খেতে হবে আপনাকে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি ভাংতে সাহায্য করে।একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে নিয়ে এর সাথে এক চামুচ মধু এবং আধা চামুচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন। দেখবেন কাজ হবে।
বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম জলতে মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতীদের জন্য ঔষধটি নিষেধ।
ব্রণ দূর করতে: নিমপাতার গুঁড়ো জলতে মিশিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এতে ব্রণ দূর হবে এবং ব্রণ থেকে তৈরি জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হবে। এটা ব্রণ দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি।
চুলের যত্নে নিম গাছের পাতার ব্যবহার:
চুল: উজ্জ্বল,সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম গাছের পাতার অবদান অপরিসীম। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে। চুলের জন্য নিম পাতার ব্যবহার অদ্বিতীয়।চুলে প্রতি সপ্তাহে ১ দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টারমত রাখুন। এবার ১ ঘন্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন চুল পড়া কমার সাথে সাথে চুল নরম ও কোমল হবে। মধু ও নিমপাতার রস একত্রে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান। এবার ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপার শেম্পু করুন দেখবেন আপনার চুল হয়ে গেছে ঝলমলে সিল্কি ও আগের থেকে অনেক সুন্দর। আবার আপনি চাইলে এক চা-চামচ আমলকির রস, এক চা-চামচ নিমপাতার রস ও এক চা-চামচ লেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টকদই মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করুন তারপর দেখুন আপনার চুল হয়ে গেছে আগের থেকেও অনেক কোমল, নরম ও সুন্দর।
অ্যালার্জি: অ্যালার্জির সমস্যায় নিম পাতা ফুটিয়ে স্নান করুন। অ্যালার্জি যাবে ১০০ হাত দূরে। তাছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে বেঁটে শরীরে লাগান। অ্যালার্জি কমবেই।
আরো এমন তথ্য জানতে ভিজিট করুন এখানে
Wow..good to know!