বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন ই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে চলছ। এর ফলে দিন দিন তীব্র চাপের মধ্যে পরছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এরই মধ্যে একটি গবেষক দল সতর্ক করে দিয়েছে। বলেছে যে এই ভাবে চলতে থাকলে চলতি মাসের শেষের দিকে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।
গতকাল শুক্রবার শনাক্ত হওয়া রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ৬০ হাজার অতিক্রম করে। এই সংখ্যা বেড়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ৯০ হাজার এবং জুন মাসের শেষের দিকে ১ লাখ ২৫ হাজারে পৌঁছাতে পারে। এই অনুমানটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি টিম।
দলটির প্রধান ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিউল শিমুল বলেন, মহামারি মডেল অনুসরণ করে অনুমানটি করা হয়েছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগী বাড়ার হারের ওপর ভিত্তি করে তিনি বলেছেন, সবকিছু পুনরায় চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের বিস্তার আরও দ্রুত হারে বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো না হলেও ব্রাজিল বা রাশিয়ার মতো বাংলাদেশে ও এই ভাইরাসের পরবর্তী উপকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, অপর্যাপ্ত পরিমাণ পরীক্ষা ও রোগী সনাক্তকরণের কারণে অনেক রোগী এখনও শনাক্ত করা যায়নি।ফলে এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।
সরকার প্রতিদিনই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। তারপরও দেশের অধিক সংখ্যক জনসংখ্যার কারণে, প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র দুজনের পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বনিম্ন হারের একটি। তারপরও সরকার যথাযথভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে অনবরত।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সতর্কতা না মেনে সরকারি-বেসরকারি অফিস, পরিবহন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার কারণে বিষয়টিকে আরও খারাপ করে তুলবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮২৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে এর ফলে মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬০ হাজার ৩৯১ এ।একই সময়ে ৩০ জন মারা গেছেন এবং এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সর্বমোট ৮১১ এ।
এই ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সর্বমোট ৫২টি ল্যাবে ১২ হাজার ৮০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গতকাল পর্যন্ত, করোনাভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপীয় দেশ বেলজিয়ামকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ শনাক্ত রোগীর সংখ্যার দিকে থেকে বিশ্বে ২০ তম স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শনাক্ত হয়েছে গত দুই সপ্তাহে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন জন সাধারণের অসচেতনতাকে।
২৮ মে সরকার ঘোষণা করে, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান ছুটি আপাতত বর্ধিত করা হবে না। এমন ঘোষণায় সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশনা অগ্রাহ্য করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই কাজে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরে আসে হাজারো মানুষ। একই দিন, সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে যে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা না হলে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আরো ব্যাপক হারে বাড়বে।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা.মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রবণতা কমার আগ পর্যন্ত শাট-ডাউন না তোলার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিঘ্ন ঘটছে বলে সরকার পুনরায় সবকিছু খুলে দিয়েছে। যদিও অনেক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের দেখতে হবে এই ব্যবস্থাগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও এমন স্যাস্থ বিষয়ক তথ্য জানতে ভিজিট করুন এখানে . . .